25.6 C
New York

লোকসভা নির্বাচনের আগে এনআরসি-আধার নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছেন মন্ত্রীরা: ফোরাম ফর সোস‍্যাল হারমনি

Published:

শিশির দে, শিলচর

সম্প্রতি বিধানসভায় আসাম সরকারের পক্ষে মন্ত্রী পিযুষ হাজারিকা এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন যে ২৭ লক্ষ লোকের আধার ইস‍্যু করতে হলে সুপ্রিম কোর্টের অনুমতি লাগবে। আজ আবার মুখ‍্যমন্ত্রীর মুখেও একই রকমের বিভ্রান্তিকর কথা শুনা গেল। গত ৫ বছর ধরে আধার আটকে রেখে এখন নির্বাচনের প্রাক্কালে সরকার বল সুপ্রিম কোর্টে ঠেলে দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে চাইছে। অসম সরকারের এই বক্তব্যে ফোরাম ফর সস‍্যাল হারমনি তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছে।ফোরাম মনে করে রাজ‍্য সরকার চাইলেই মুহুর্তের মধ্যে ২৭ লক্ষের অর্ধাংশের বেশি লোকের যাদের নাম এনআরসিতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে তাদের আধার ইস‍্যু করাতে পারে। এনআরসি হিয়ারিং এর সময় প্রায় ২৭ লক্ষের বায়োমেট্রিক তথ‍্য সংগ্রহ করেছিল রাজ‍্য সরকার। চূড়ান্ত খচড়া এনআরসি প্রকাশের পর দাবি আপত্তি পর্যায়ের জন‍্য তৈরি এসঅপিতে প‍্যারা নং ৯ যোগ করা হয় যার মাধ্যমে রাজ‍্য সরকার আধার কতৃপক্ষের সহযোগিতায় বায়োমেট্রিক তথ‍্য সংগ্রহ করবে বলে উল্লেখ করা হয়। সঙ্গে এটাও বলা হয় যে যাদের নাম এনআরসিতে অন্তর্ভুক্ত হবে তাদের আধার ইস‍্যু করা হবে। এছাড়া অন‍্য কোথাও এমনকি সুপ্রিম কোর্টের কোন আদেশেই এনআরসি সংক্রান্তে বায়োমেট্রিক তথ‍্য সংগ্রহ করে আধার আটকে রাখার কোন উল্লেখই নেই। এরকম কোন আইনের বিধানও নেই। এর মানে দাড়ায় এই যে রাজ‍্য সরকার বায়োমেট্রিক সংগ্রহ করে আধার আটকেছে, যাদের নাম এনআরসিতে অন্তর্ভুক্ত হবে তাদের আধার ইস‍্যু করবে রাজ‍্য সরকারই। বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহের কিছুদিন পরেই ৩১ আগষ্ট ২০১৯ এ প্রকাশিত সাপ্লিমেন্টারি তালিকা মারফত ২৭ লক্ষের অধিকাংশ নাম এনআরসিতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে। তাদেরকে আধার ইস‍্যু করতে রাজ‍্য সরকার যদিও বাধ‍্য কিন্তু তা না করে রাজ‍্য সরকার বল সুপ্রিম কোর্টের দিকে ঠেলে দিয়ে লোককে বোকা বানানোর চেষ্টা করছে। যে ১৯ লক্ষ লোকের নাম প্রকাশিত চূড়ান্ত এনআরসিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, এনআরসির নিয়ম অনুযায়ী তাদের বিদেশি আদালতে আপিল করার কথা। সেই পথ বন্ধ করে রেখেছে ডবল ইঞ্জিন রাজ‍্য ও কেন্দ্র সরকার। আপিল প্রক্রিয়ার জন্য গঠিত ২০০ অতিরিক্ত বিদেশি ট্রাইব্যুনাল আপিল প্রক্রিয়া আরম্ভ না করেই বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। সরকারের কোন কোন প্রবক্তা আরও এককদম এগিয়ে প্রকাশিত চূড়ান্ত এনআরসিকে পুনরায় ভেরিফিকেশনের নামে জনগণকে আরেক দফা হেনস্থা করার হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন ধারাবাহিক ভাবে। অথচ রিভেরিফিকেসনের কোন আইনি প্রবিধান নেই, এমনকি এবিষয়ে সরকারের তরফে সুপ্রিম কোর্টে কোন আবেদন পর্যন্ত নেই। ফোরাম মনে করে বর্তমানে এনআরসি বা আধার ইস‍্যু প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের কোন প্রত‍্যক্ষ ভুমিকা নেই। চূড়ান্ত এনআরসি প্রকাশের পর সুপ্রিম কোর্ট আর আগের মত প্রত‍্যক্ষ মনিটরিং করছেনা। এনআরসির বাকি প্রক্রিয়া, আপিল, আধার, জাতীয় পরিচয় পত্র প্রদান, সবই সরকারের ইচ্ছাধীন এবং সরকারেরই দায়িত্বের মধ‍্যে পড়ে। অন্তর্ভুক্তির সাপ্লিমেন্টারি তালিকা এনএসকে ছাড়াও সার্কেল এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে উপলব্ধ আছে। চূড়ান্ত এনআরসির সম্পূর্ণ তালিকা অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছে এবং উপলব্ধ আছে। আরজিআই মোট ৯ বার আসাম এনআরসি প্রস্তুতির জন‍্য গেজেট নোটিফিকেশন প্রকাশ করেছেন। সেই অনুযায়ী এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এবং তত্ত্বাবধানে অসমে এনআরসি তৈরি করা হয়েছে। ৩১ আগষ্ট ২০১৯ আরজিআই এর প্রতিনিধি, সুপ্রিম কোর্টের নোডাল অফিসার তথা রাজ‍্য সমন্বয়ক প্রতীক হাজেলা চূড়ান্ত এনআরসি প্রকাশ করেন। আরজিআই এর আর কোন করনীয় বাকি নেই। কোথাও এরকম কোন প্রবিধান বা নির্দেশ নেই। এই ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর প্রচার উদ্দেশ‍্যপ্রণোদিত ভাবে করা হচ্ছে।
যাদের বায়োমেট্রিক দিয়েও আধার ইস‍্যু পেন্ডিং, তাদের যে আধার এনরলমেন্ট নং দেওয়া হয়েছে সেটাকে অন‍্য কোন পরিচয়পত্রের সাথে আধারের বিকল্প হিসেবে ব‍্যবহার করা যাবে বলে আধার কতৃপক্ষ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে অনেক আগেই (11-08-2022)। এনআরসি হিয়ারিং এর সময়ে বায়োমেট্রিক দেওয়ার পর তাদেরকে একনলেজমেন্ট হিসেবে যে কাগজ দিয়েছে সেটাতে আধার এনরলমেন্ট আইডি আছে। সেটাও মানা হচ্ছে না। ফলে লোক নানা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং বিড়ম্বনার শিকার হয়ে চলেছেন গত প্রায় ৫ বছর যাবত।
এনআরসি থেকে নাম বাদ পড়া প্রকৃত ভারতীয় নাগরিকদের আপিলের সুযোগ না দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে, এমনকি যাদের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে তাদের নাম আবার বাতিল করার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। সরকার পক্ষের নেতারা আধার সমস্যার সমাধান করতে চাইছেন না এবং সুপ্রিম কোর্টের নামে মিথ্যা অযুহাত খাড়া করে জনগনকে বিভ্রান্ত করছেন। এই এনআরসি – আধার সংক্রান্ত জনগণের বাস্তব সমস্যা সমাধানে জনগণকে সচেতন হওয়ার এবং সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে ফোরাম। সদিচ্ছা থাকলে কোন অযুহাত না দিয়ে আসন্ন নির্বাচনের আগে আধার সমস‍্যার সমাধান করুক সরকার এবং এনআরসি আপিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নাগরিকত্বের সমস্যার সমাধান হোক।
উল্লেখ্য যে ফোরাম ফর সোস‍্যাল হারমনি নাগরিকত্বের প্রশ্নে ২০১৪ সালে আসামে প্রকাশিত সচিত্র ভোটার তালিকায় নাম থাকা সকলকে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে এনআরসিতে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি করে আসছে। ২০১৪ এর ক্রম উন্নিত ভোটার তালিকা প্রকাশিত হয়েছে ২০২৪ এ, সেই তালিকায় নাম থাকা সকলেই ভারতীয় নাগরিক। আসামে সন্দেহ যুক্ত নাগরিকদের ডি-ভোটার বানিয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে বিদেশি আদালতে। ফলে সাধারণ যুক্তিতে ভোটারদের থেকে ডি-ভোটার বাদ দিলে যারা থাকেন তারা সন্ধেহাতিত ভারতীয় নাগরিক। সকল ভোটারদের নাম চূড়ান্ত এনআরসিতে অভিলম্বে অন্তর্ভুক্ত করা হোক এবং সকলকে আধার কার্ড ইস‍্যু করা হোক। এই দাবিতে ফোরাম এখনো অবিচল রয়েছে।
শিশির দে

Related articles

E Paper July 23

E Paper July 15

spot_img

Recent articles

E Paper July 23

E Paper July 15

E Paper July 8

spot_img